সুস্থ থাকতে চান? সামুদ্রিক মাছ খান………
বর্তমান সময়ে হার্টের বিভিন্ন অসুখ
ও জটিলতা সারাবিশ্বে প্রায় মহামারী আকার ধারণ করে আছে যার একটি প্রধান কারণ হলো খাদ্যাভ্যাস।
দৈনন্দিন জীবণে আমরা যেসব রুচিদায়ক খাবার বিভিন্ন স্থানে খেয়ে থাকি তাতে দুই ধরণের
কোলেস্টেরল থাকতে পারে- ১) গুড কোলেস্টেরল (High-density lipoprotein), যেটি অতিরিক্ত
ফ্যাট বা চর্বিকে করোনারি আর্টারি (Coronary artery) ও দেহকোষ থেকে লিভার এ এনে জমা
করে, ২) বেড কোলেস্টেরল (Low-density lipoprotein), যেটি লিভার থেকে ফ্যাট বা চর্বিকে
করোনারি আর্টারি ও দেহকোষে স্থানান্তর করে থাকে। যারা অতিরিক্ত রেড মিট (Red meat)
যেমন গরু, ছাগলের মাংস ও অধিক তেলযুক্ত খাবার খেয়ে থাকে তাদের শরীরে বেড কোলেস্টেরল
এর মাত্রা বাড়তে থাকে যার ফলে লিভার থেকে ফ্যাট করোনারি আর্টারিতে জমা হয় এবং প্লাক
(Plaque) সৃষ্টি করে নালী গুলোকে সংকুচিত করে হার্টে রক্ত ও অক্সিজেন পরিবহনে প্রতিবন্ধকতার
সৃষ্টি করে। এটিকে মেডিকেল সায়েন্সে বলা হয় “Atherosclerosis”। এধরণের সমস্যার ফলে
হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইল্যুরসহ নানা ধরণের করোনারি (Coronary) ও কার্ডিওভাস্কুলার
(Cardiovascular) জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া বেড কোলেস্টরল সমৃদ্ধ খাবার হাই
প্রেশার ও ডায়াবেটিস রোগীদেরও মারাত্বক ক্ষতি করতে পারে এবং সৃষ্টি করে পাকতান্ত্রিক
জটিলতার।
বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ গুড কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ আর এতে
রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ ওমেগা-৩ (Omega-3) আন-স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড। আশ্চর্জনক হলেও
সত্যি যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সাধারণত উদ্ভিদজাত খাদ্যে পাওয়া গেলেও সবচেয়ে দুর্লভ
EPA (Eicosapentaenoic acid), DHA (Docosahexaenoic acid) প্রাণিজাত খাদ্য হিসেবে একমাত্র
মাছেই পাওয়া যায়। তবে মিঠা পানির মাছে ওমেগা-৩ এর চেয়ে ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ
বেশি। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রক্তে লিপিড বা ফ্যাটের মাত্রা কমিয়ে হার্টের রোগবালাই প্রতিরোধ
করে, বয়স্ক মানুষের শরীরের হাড়ের সংযোগস্থলের সান্দ্রতা (Viscosity) রক্ষা করে জয়েন্ট
ও মেরুদন্ডের ব্যথা প্রতিহত করে, শরীরের বিষণ্ণতা দূর করে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে
। তাছাড়া শিশুদের শরীর গঠনে ও মস্তিষ্কের বিকাশে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে ওমেগা-৩
ফ্যাটি এসিডসমূহ।
মৎস্যজাত প্রোটিনে দরকারী অ্যামাইনো
এসিডগুলোর উপস্থিতিও সন্তোষজনক যেগুলো আমাদের শরীর গঠনে ও বিভিন্ন শারীরিক প্রক্রিয়ার
গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। সামুদ্রিক মাছ ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়োডিনসহ অন্যান্য খনিজ
পদার্থ ও ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ ও সহজে হজমযোগ্য হওয়ায় কোনপ্রকার পাকতান্ত্রিক জটিলতার
সৃষ্টি করেনা। হাড় ক্ষয় (Osteoporosis) ও
হাড়ের দুর্বলতা (Osteomalacia) প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য সামুদ্রিক মাছের
বিকল্প নেই। এছাড়াও সামুদ্রিক মাছের তেল বিভিন্ন রোগের প্রতিকারে অভাবনীয় ভূমিকা পালন
করে যা হয়তো বলে শেষ করা যাবেনা।
একটু সুস্থ থাকার জন্য আমরা কত দামি
দামি ঔষধ, কৃত্রিম হেলথড্রিঙ্ক খেয়ে থাকি কিন্তু অনেকেই জানিনা আমাদের হাতের কাছেই
আছে শরীর সুস্থ রাখার চাবিকাঠি। হাতের কাছের অল্প দামের সামুদ্রিক মাছ নিয়মিত খেয়েই
আমরা সুস্থ থাকতে পারি হাজারগুণ। যা প্রয়োজন তা হলো একটু সচেতনতা
ও নজরদারির।
অন্তর সরকার
“ফ্যাকাল্টি অব ফিশারিজ”
“চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস
বিশ্ববিদ্যালয়”
Email: antorsarkar1@gmail.com
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন