মাছের আঁইশের নানাবিধ ব্যবহারঃ
মাছের আঁইশ বলতে আমরা
সাধারণত মাছের উচ্ছিষ্ট অংশ বুঝে থাকি যা আমরা সচরাচর ফেলে দেই। কিন্তু এই আঁইশের
নানাবিধ ব্যবহার সম্পর্কে আমরা অনেকেই অজ্ঞাত। মাছের আঁইশের কিছু আশ্চর্য করা
ব্যবহার নিয়েই মূলত আজকের এই লেখা।
শক্তি উৎপাদনঃমাছের
আঁইশের একটি গাঠনিক উপাদান হলো কোলাজেন (Collagen) ফাইবার যার রয়েছে bio-piezoelectric capacity অর্থাৎ এর উপর যখন কোন
প্রকার বাহ্যিক চাপ বা শক্তি প্রয়োগ করা হয় তখন এর থেকে বৈদ্যুতিক চার্জ উৎপন্ন
হয়। চীন ও জাপানে এই আঁইশ ব্যবহার করে Bio-piezoelectric nanogenerator
তৈরি করা হয় যেগুলো দ্বারা রিচার্জেবল ব্যাটারিতে চার্জ দেয়া যায়। তাছাড়া ঘরোয়া
বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে মাছের আঁইশ থেকে তৈরি এই Bio-piezoelectric
nanogenerator থেকে তৈরি বিদ্যুৎশক্তি।
ফার্মাসিউটিক্যালসঃ মাছের আঁইশে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু
অ্যামাইনো এসিড যেমনঃ Glycine, Proline, Hydroxy-proline যার কারনে মাছের আঁইশের
পাওডার বিভিন্ন দেশে স্যুপের সাথে পুষ্টি প্রদায়ক উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
তাছাড়া Collagen
সমৃদ্ধ হওয়াতে কৃত্রিম কর্ণিয়া ও কৃত্রিম হাঁড় তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়
মাছের আঁইশ। Degenerative joint
disorder রোগের প্রতিকারক হিসেবেও মাছের আঁইশ ব্যবহার করা হয়। বিশেষ কিছু মাছের
আঁইশ মানুষের পুড়ে যাওয়া অংশে চামড়া প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য গবেষণা
চলমান রয়েছে।
কসমেটিক্স বা প্রসাধনীঃ মহিলাদের
সাধের প্রসাধনী লিপস্টিক ও নেইল পলিশের একটি অত্যাবশ্যক উপাদান হলো মাছের আঁইশ
থেকে আহরিত Guanine যৌগ। এই Guanine
ব্যবহারের ফলে এই ধরণের প্রসাধনীর উজ্জ্বল ভাব ও স্থায়ীত্ব বজায় থাকে। তাছাড়া
মেকআপ ও ব্লাশ তৈরিতেও ব্যবহার হয় মাছের আঁইশ থেকে আহরিত Guanine যৌগ। বাংলাদেশ
থেকে প্রতিবছর বিশাল পরিমাণ মাছের আঁইশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।
পরিবেশ দূষণ রোধঃ পরিবেশ দূষণের মধ্যে বিশেষত পানি দূষণের
জন্য দায়ী একটি কারণ হলো “Heavy metal pollution”। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা গবেষণার
মাধ্যমে মত দিয়েছেন যে “Heavy metal pollution” রোধে. মাছের আঁইশ খুবই
কার্যকরী। মাছের আঁইশের রয়েছে “Bio-absorbance capacity” যার কারণে বিভিন্ন
Heavy-metal যেমনঃ কপার, সীসা ইত্যাদির দূষণ রোধ করতে মাছের আঁইশ থেকে তৈরি পাওডার
খুবই কার্যকরী, পরিবেশবান্ধব ও অর্থসাশ্রয়ী।
আমদের প্রতিনিয়ত ফেলে
দেওয়া মাছের আঁইশের এতরকমের ব্যবহার সত্যিই অবাক করা। আমাদের চোখে যা বর্জ্য তা
অ্ন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে খুবই মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ।
---------------------------------------------তথ্যসূত্রঃ
FIsholover, Elsevier, Aquagarden
অন্তর সরকার
“চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও
এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়”
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন