স্বল্প খরচে গড়ে তুলুন মিনি “একোয়াপনিক্স” (Aquaponics)


‘একোয়াপনিক্স” (Aquaponics) শব্দটির সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। সংক্ষেপে বলতে গেলে মাছ ও উদ্ভিদের সমন্বিত চাষ পদ্ধতি যাতে মাছের বর্জ্য পদার্থকে গাছের পুষ্টি হিসেবে ব্যবহার করে পানি পরিশোধনপূর্বক পুনরায় মাছের ধারকে ব্যবহার করা হয়। আমাদের ঘরের কোণায়, জানালার পাশে বা ছাদ ও আঙ্গিনার এক পাশে আমরা চাইলেই গড়ে তুলতে পারি একটি সখের মিনি “একোয়াপনিক্স” (Aquaponics)

কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করলামঃ

যা যা প্রয়োজনঃ

১) মাছের ট্যাঙ্ক ও গাছের বেডের জন্য প্লাস্টিক ব্যারেল (জায়গা অনুসারে)। খরচ হবে সর্বোচ্চ ৫০০-১০০০ টাকা।
২) ওয়াটার লাইন পাইপ ও প্লাস্টিক পাইপ, পাইপ কানেক্টর। সবমিলিয়ে ২০০-৩০০ টাকা)
৩) একটি স্বল্প ক্ষমতার  অ্যাকুরিয়াম মোটর (পানি উত্তোলনের জন্য)। (৩০০ হতে ৬০০ টাকা)
৪) প্লাস্টিক বোতল।
৫) কংক্রিট, বালি, কাঠের তুষ, কাঠ কয়লা।
৬) ধাতব বা কাঠের স্ট্যান্ড (গাছের বেড বসানোর জন্য)। খরচ হতে পারে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা।
৭) অ্যাকুরিয়াম এয়ারেটর। (১৫০-২০০ টাকা)
৮) কাজ করার জন্য আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি।


কার্যপদ্ধতিঃ



১) মাছের ট্যাঙ্ক বা ব্যারেলটি সুবিধামতো স্থাপন করুন।
২) একটি প্লাস্টিক ড্রাম বা ব্যারেল আড়াআড়িভাবে কেটে নিন গাছের বেড তৈরির জন্য।
৩) একটি প্লাস্টিক বোতলকে মাঝখান বরাবর কেটে নিন এবং চারপাশে ছোট ছোট ছিদ্র করুন।
৪) গাছের বেড তৈরীর জন্য সংগৃহীত ব্যারেলের তলার দিকে ছিদ্র করুন (প্লাস্টিক বোতল স্থাপনের জন্য)। লক্ষ্য রাখবেন ছিদ্র যেন প্লাস্টিক বোতলের মুখের ব্যাস বরাবর হয়।
৫) ব্যারেলের তলার ছিদ্রটিতে উপর দিক থেকে উল্টোভাবে প্লাস্টিকের কাটা বোতলটি স্থাপন করুন। ভালোভাবে লেগে থাকার জন্য সিলিকন গাম ব্যবহার করতে পারেন।
৬) বোতলের মুখে একটি পাইপ লাগান যাতে মাছের ট্যাঙ্কে পানি যেতে পারে
৭) ব্যারেলটিতে কংক্রিট, বালি, তুষ ও কয়লা দ্বারা একটি বেড তৈরি করুন।
৮) মাছের ট্যাঙ্ক বা ধারকের উপর ধাতব স্ট্যান্ড স্থাপন করে তার উপর গাছের বেডটি স্থাপন করুন।
৯) মাছের ট্যাঙ্ক এর তলার কিছুটা উপর থেকে গাছের বেডের উপর পর্যন্ত মাপের ওয়াটারলাইন পাইপ কেটে নিন।
১০) পাইপটিকে সুবিধামতো দুইভাগে ভাগ করে  কানেক্টর দিয়ে মোটরের দুইপাশে লাগিয়ে দিন।
১১) মোটরের উপরের অংশের পাইপ গাছের বেডে স্থাপন করুন যাতে গাছের বেডে পানি যায় (চাইলে পাইপের মুখে ছোট ছিদ্রযুক্ত ঢাকনাও বসাতে পারেন) এবং নিচের অংশ মাছের ট্যাঙ্কে রেখে দিন।
১২) চিত্রানুযায়ী কাঠামো এবং সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটি তৈরি করুন।
১৩) কাঠামো দৃঢ় করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।

পুষ্টিচক্রঃ

মাছের ট্যাঙ্ক থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি স্বল্প শক্তির বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যে গাছের বেডে যায় এরপর পাইপলাইনের সাহায্যে পানি ক্রমান্বয়ে গাছের বেডে পড়ে মাছের নিঃসৃত রেচন পদার্থ হলো অ্যামোনিয়া সমৃদ্ধ, অর্থাৎ নাইট্রোজেন যুক্ত তাছাড়া মাছের নিঃসৃত রেচন পদার্থে এমন অনেক পদার্থ আছে যা গাছের পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে গাছের শিকড়ে অবস্থিত ডি-নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া উক্ত নিঃসৃত পদার্থকে ভেঙ্গে নাইট্রেটে পরিণত করে যা গাছে পুষ্টি সরবরাহ করে। গাছের বেড থেকে পানি দূষণমুক্ত হয়ে ছিদ্রযুক্ত প্লাস্টিক বোতলের মধ্য দিয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে আবার মাছের ট্যাঙ্কে ফিরে আসে এভাবে পানি চক্রাকারে ব্যবহার করা হয়

যা যা চাষ করতে পারবেনঃ

মাছের মধ্যে রয়েছে তেলাপিয়া, পাবদা, কই, খলিশা, অ্যাকুরিয়াম ফিশ ইত্যাদি  আরো অনেকউদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে পুদিনা, থানকুনি, হেলেঞ্চা,মালঞ্চ,পুঁই, ক্যাপসিকাম, টমেটো, কচু তাছাড়া আরো অন্যান্য।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে  কমে যাচ্ছে আবাদী জায়গার পরিমাণ। তাই এখন আর অনেকটা জায়গাজুড়ে সখের বাগান করে ওঠা সম্ভব হয়না। এই মিনি ‘একোয়াপনিক্স” (Aquaponics) ব্যবস্থাটি করতে পারে বাগানপ্রিয় মানুষগুলোর সাধপূরণ এই ইট পাথরের শহরে তাও স্বল্প খরচে।






মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ঝিনুক থেকে মুক্তা তৈরির রহস্য.......

মাছ, পোল্ট্রি, প্রাণিখাদ্য ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ব্ল্যাক সোলজার মাছির (Black soldier fly) লার্ভা:

মাছের আঁইশের নানাবিধ ব্যবহারঃ